শনিবার ১৮ মে ২০২৪
Online Edition

ইসরাইলী হামলায় গাজায় নিহত আরও ৫৪ ॥ প্রাণহানি বেড়ে ৩৪১৫১

সংগ্রাম ডেস্ক: ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরাইলী বাহিনীর হামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় আরও অন্তত ৫৪ ফিলিস্তিনী নিহত হয়েছে। এই সময়ে আহত হয়েছে আরও ১০৪ জন। এ নিয়ে গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে চলমান এই যুদ্ধে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৪ হাজার ১৫১ জনে দাঁড়িয়েছে। মোট আহত হয়েছে ৭৭ হাজার ৮৪ জন।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সোমবার এ তথ্য জানিয়েছে। এক বিবৃতিতে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, অনেক মানুষ এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং রাস্তায় আটকে আছে। কারণ উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছতে পারছেন না। মিডল ইস্ট মনিটর, এএফপি, বারগামা অনলাইন, এনএনএ, সিনহুয়া, ইয়েল ডেইলি নিউজ, রয়টার্স।

জাতিসংঘের মতে, গাজায় ইসরাইলী আগ্রাসনে খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধের তীব্র সংকটের মধ্যে ভূখ-ের ৮৫ শতাংশ বাসিন্দা অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। সেই সঙ্গে অঞ্চলটির ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। জাতিসংঘ আরও বলছে, দীর্ঘ এ সময় ধরে চলা সংঘাতের কারণে মানবিক সংকটে দিন পার করছেন ফিলিস্তিনীরা। এছাড়াও খাবার, পানি, ওষুধ ও প্রয়োজনীয় মানবিক সহায়তার অভাবে উপত্যকাটির ২৩ লাখেরও বেশি বাসিন্দা চরম ক্ষুধা ও ভয়াবহ অপুষ্টিতে ভুগছেন।

গত মাসের শেষের দিকে (২৫ মার্চ) জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবিতে একটি প্রস্তাব পাস করেছে। হামাস এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানালেও, ইসরাইল যুদ্ধবিরতির আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছে এবং ফিলিস্তিনী ছিটমহলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়। ইসরাইলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) গণহত্যার অভিযোগ রয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে আইসিজে একটি অন্তর্বর্তী রুল জারি করে তেল আবিবকে গণহত্যামূলক কাজ বন্ধ করতে এবং গাজার বেসামরিক নাগরিকদের মানবিক সহায়তা প্রদানের গ্যারান্টি দেওয়ার ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয়। সূত্র: সিনহুয়া, আল জাজিরা

গাজায় এতিম শিশু ১৮ হাজারের বেশি

যুদ্ধের সবচেয়ে সহজ ও নির্মম শিকার শিশু। ফিলিস্তিনের গাজায় প্রতিনিয়তই মারা যাচ্ছে তারা। এ নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গণমাধ্যমকে সরব দেখা গেলেও এক মাস ধরে অজ্ঞাত কারণে তাদের সক্রিয়তা কমেছে। যেন বিশ্ব ভুলে গেছে এ নির্দোষদের, যারা বোমা, গুলী ও অনাহারে প্রতিনিয়ত মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে। ইউনিসেফের তথ্যমতে, প্রতি ১০ মিনিটে গাজায় একটি শিশু হতাহত হচ্ছে। এ কারণে দ্রুতই একটি যুদ্ধবিরতি দাবি করছে জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থাটি। তারা মনে করেন, কেবল যুদ্ধবিরতিই পারে সেখানে অব্যহত শিশুমৃত্যু ঠেকাতে। মিডলইস্ট মনিটরের তথ্য অনুযায়ী, ৭ অক্টোবরের পর ইসরাইলের হামলায় গাজায় গত রোববার পর্যন্ত ৩৪ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৭৭ হাজারের বেশি। এরমধ্যে প্রাণ গেছে ১৪ হাজার ৬৮৫ শিশুর। নারী রয়েছেন ৯ হাজার ৬৭০ জন। জাতিসংঘের ত্রাণ বিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ’র গণমাধ্যম উপদেষ্টা আদনান আবু হাসনা জানান, গাজায় শিশুদের পাশাপাশি প্রতিদিন ৬৭ জন নারী নিহত হচ্ছেন, যাদের মধ্যে ৩৭ জন মা-ও রয়েছেন। শত শত শিশুরা এতিম হয়ে গেছে। গাজায় এখন ১৮ হাজার এতিম শিশুর বাস, যারা সবকিছুই হারিয়েছে পরিবার, আদর, জীবন।

ইসরাইলের সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে ব্যাপক হামলা হিজবুল্লাহর

ইসরাইলের উত্তরাঞ্চলে সামরিক ঘাঁটিতে রকেট হামলা চালিয়েছে লেবাননের শক্তিশালী সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ। দক্ষিণ লেবাননের গ্রাম লক্ষ্য করে ইসরাইলী হামলার জবাবে উত্তর ইসরাইলের সেনা সদর দপ্তরে এই হামলা চালায় তারা। গতকাল মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উত্তর ইসরাইলের একটি সেনা সদর দপ্তরে ‘কয়েক ডজন’ কাতিউশা রকেট নিক্ষেপ করা হয়েছে বলে সোমবার জানিয়েছে হামাসের মিত্র হিজবুল্লাহ। দক্ষিণ লেবাননের বিভিন্ন গ্রাম লক্ষ্য করে ইসরাইলের হামলার জবাবে এই হামলা চালানো হয়েছে।

আরেকটি আগ্রাসনের চেষ্টা করলে ইসরাইলকে শক্তিশালী জবাবের হুঁশিয়ার দিল ইরান

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাসের কানয়ানি বলেছেন, ইসরাইল যদি ইরানের ওপরে কিংবা তার স্বার্থের বিরুদ্ধে আর কোনও ধরনের আগ্রাসন চালানোর চেষ্টা করে তাহলে আরও শক্তিশালী জবাব দেওয়া হবে। সোমবার সাপ্তাহিক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি। নাসের কানয়ানি বলেন, “আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে ইসরাইল সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে আমাদের কূটনৈতিক স্থাপনায় যে আগ্রাসন চালিয়েছিল তার বৈধ এবং চরম জবাব দিয়েছি। ফের যদি ইসরাইল কোনও ধরনের ভুল করে তাহলে ইরানের জবাব হবে আরও বেশি কঠোর।” গত ১ এপ্রিল সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানের কনস্যুলেটে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইসরাইল। ওই হামলায় ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ডস কর্পসের কুদস ফোর্সের কমান্ডার জেনারেল মোহাম্মদ রেজা জাহেদি, তার ডেপুটি জেনারেল মোহাম্মদ হাদি হাজি রাহিমি ছাড়াও আরও পাঁচজন সহকারী অফিসার নিহত হন।

এর প্রতিশোধ হিসেবে গত ১৩ এপ্রিল দিবাগত রাতে ইসরাইলে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোনের সিরিজ হামলা চালায় ইরান। ‘ট্রু প্রমিজ’ নামের প্রতিশোধমূলক ওই হামলায় অধিকৃত ফিলিস্তিনী ভূখ-জুড়ে অবস্থিত ইসরাইলী সামরিক স্থাপনাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে দাবি তেহরানের।

মার্কিন ৩ বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনপন্থি আন্দোলনকারীদের গ্রেপ্তার

যুক্তরাষ্ট্রের তিন বিখ্যাত উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় ও নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কয়েক ডজন ফিলিস্তিনপন্থি আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করেছে মার্কিন পুলিশ। বিশ্ববিদ্যালয়ে সার্বক্ষণিক অবস্থানের জন্য ক্যাম্পাসে যে অস্থায়ী তাঁবু খাটিয়েছিলেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা, সেসবও তছনছ করে ফেলা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের আরেক বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির নিউ ইয়র্ক ক্যাম্পাসে গত এক সপ্তাহ ধরে তাঁবু গেড়ে অবস্থান নিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এর প্রতিক্রিয়ায় সোমবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ক্লাস কর্মসূচি বন্ধ ঘোষণা করে। ওই দিনই কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউইয়র্ক ক্যাম্পাস, ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের কানেকটিকাট ক্যাম্পাস এবং নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানহাটান ক্যাম্পাসে অভিযান চালিয়ে আন্দোলনরত কয়েক ডজন শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

ঠিক কত জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তা প্রকাশ করেনি পুলিশ। তবে শিক্ষার্থীদের পরিচালিত ও প্রকাশিত ইয়েল ডেইলি নিউজের দাবি, মোট সোমবার রাতে মোট ৪৫ জন শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। উচ্ছেদ অভিযানে কেউ আহত হননি বলে জানা গেছে।

উত্তর গাজায় আবারও হামলা জোরদার করলো ইসরাইল

উত্তর গাজায় হামলা আরও জোরদার করেছে ইসরাইলী সামরিক বাহিনী। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সেখানে সবচেয়ে ভারী গোলাবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে বাসিন্দাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক। মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) এই তথ্য জানিয়েছেন অঞ্চলটির বাসিন্দারা। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা এই খবর জানিয়েছে। উত্তর গাজার বাসিন্দারা এবং হামাস মিডিয়ার জানানো তথ্যমতে, গাজা উপত্যকার উত্তর প্রান্তের বেইত হ্যানউনের পূর্ব দিকে ইসরাইলী সেনা ট্যাঙ্কগুলো নতুন করে হামলা শুরু করেছে। তবে সেগুলো এখনও শহরের ভেতরে প্রবেশ করতে পারেনি। ট্যাংকারের ছোঁড়া কয়েকটি গুলী বিদ্যালয়ে আঘাত হেনেছে। সেখানে গাজার বাস্তুচ্যুত বাসিন্দারা আশ্রয় নিচ্ছিলেন।

ইহুদি হলিডে পাসওভার উপলক্ষে ইসরাইলে সরকারি অফিস এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রাখা ছিল। এরই মধ্যে সোমবার শেষ রাতে সেখানে রকেট হামলার সতর্কতা জারি করে ইসরাইলে। একইসঙ্গে বন্ধ রাখা হয় দক্ষিণ সীমান্ত শহরগুলো। তবে এই হামলায় হতাহতের কোনও খবর পাওয়া যায়নি।

ইরায়েলের সেরত ও নিরামে হওয়া এই হামলার দায় স্বীকার করেছে ফিলিস্তিনী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের সহযোগী একটি গোষ্ঠী।

ইসরাইলী ভূখ-ে এই হামলার পরপরই উত্তর গাজায় আক্রমণ জোরদার করেছে ইসরাইল। রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ ইসরাইলী সীমান্ত পেরিয়ে উত্তর গাজায় ঘন কালো ধোঁয়া উঠতে দেখা গেছে। বেইত হানৌন এবং জাবালিয়ার পূর্বদিকে গোলাগুলীর তীব্রতা ছিল। মঙ্গলবার সকালে গাজা শহরের অন্যতম পুরনো শহরতলি জেইতুনেও হামলা অব্যাহত ছিল। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই সেখানকার প্রধান সড়ক বরাবর অন্তত ১০টি হামলার ঘটনা ঘটেছে।

গাজার হাসপাতালে গণকবর, আতঙ্কিত জাতিসংঘ মানবাধিকার প্রধান

গাজার হাসপাতালে গণকবরের প্রতিবেদনে আতঙ্কিত হওয়ার কথা জানিয়েছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভলকার তুর্ক। গতকাল মঙ্গলবার তিনি বলেছেন, গাজায় নাসের এবং আল-শিফা চিকিৎসাসেবা ধ্বংস করা এবং সেখানে শত শত মরদেহ গণকবর দেওয়ার প্রতিবেদন দেখে রীতিমতো আতঙ্কিত তিনি। এক মুখপাত্রের বরাতে এই খবর জানিয়েছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা।

চলতি সপ্তাহে ফিলিস্তিনী কর্তৃপক্ষ খান ইউনিসের একটি হাসপাতালে গণকবরে মরদেহ খুঁজে পাওয়ার কথা জানিয়েছিল। ইসরাইলী সেনারা হাসপাতালটি পরিত্যাগ করার পর এই কবরের সন্ধান পান তারা। ইসরাইলী বিশেষ বাহিনীর অভিযানের পর আল-শিফা হাসপাতালেও লাশের খবর পাওয়া গেছে।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের মুখপাত্র রাভিনা শামদাসানি বলেছেন, ‘আমরা সতর্কতা বাড়ানোর প্রয়োজনবোধ করছি। কেননা, স্পষ্টতই একাধিক লাশ পাওয়া গেছে।’

নিহতদের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘তাদের মধ্যে কয়েকজনের হাত বাঁধা ছিল। এটি অবশ্যই আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন এবং আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘন। এই ঘটনাগুলোর আরও তদন্ত করা দরকার।’

এসময় মুখপাত্র আরও বলেন, জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় ফিলিস্তিনী কর্মকর্তাদের প্রতিবেদনটি সমর্থনে কাজ করছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, নাসেরে ২৮৩টি এবং আল-শিফায় ৩০টি লাশ পাওয়া গেছে। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, মরদেহগুলো বর্জ্যের স্তূপের নীচে চাপা পড়েছিল। তাদের মধ্যে নারী ও বয়স্ক মানুষও ছিল।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ